অপমানিত -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হে মোর দুর্ভাগা দেশ , যাদের করেছ অপমান ,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান!
মানুষের অধিকারে
বঞ্চিত করেছ যারে ,
সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাওনাই স্থান ,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান ।
মানুষের পরশেরে প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে
ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে ।
বিধাতার রুদ্ররোষে
দুর্ভিক্ষের দ্বারে বসে
ভাগ করে খেতে হবে সকলের সাথে অন্নপান ।
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান ।
তোমার আসন হতে যেথায় তাদের দিলে ঠেলে
সেথায় শক্তিরে তব নির্বাসন দিলে অবহেলে ।
চরণে দলিত হয়ে
ধুলায় সে যায় বয়ে
সে নিম্নে নেমে এসো , নহিলে নাহি রে পরিত্রাণ ।
অপমানে হতে হবে আজি তোরে সবার সমান ।
যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবেযে নীচে
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে ।
অজ্ঞানের অন্ধকারে
আড়ালে ঢাকিছ যারে
তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান ।
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান ।
শতেক শতাব্দী ধরে নামে শিরে অসম্মানভার ,
মানুষের নারায়ণে তবুও কর না নমস্কার।
তবু নত করি আঁখি
দেখিবারে পাও না কি
নেমেছে ধুলার তলে হীন পতিতের ভগবান ,
অপমানে হতে হবে সেথা তোরে সবার সমান ।
দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে ,
অভিশাপ আঁকি দিল তোমার জাতির অহংকারে।
সবারে না যদি ডাক ‘ ,
এখনো সরিয়া থাক ‘ ,
আপনারে বেঁধে রাখ ‘ চৌদিকে জড়ায়ে অভিমান —
মৃত্যুমাঝে হবে তবে চিতাভস্মে সবার সমান ।